মুক্তার হাসান, টাঙ্গাইল থেকে:: টাঙ্গাইলের আটটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুইটিতে নৌকার প্রার্থী রয়েছেন অত্যান্ত ফুরফুরা মেজাজে। বাকি ছয়টি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। নির্বাচনে জয়ী হতে শীত উপক্ষো করে ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা করেছেন বিরামহীন গণসংযোগ, দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
জেলার আটটি আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র’সহ বিভিন্ন দল থেকে ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রচারণায় নামেন তাঁরা।
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) : এই আসনে এবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
এ আসন থেকে তিনি এর আগে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি খন্দকার আনোয়ারুল হকসহ তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় এ আসনে কৃষিমন্ত্রী রয়েছেন অত্যান্ত ফুরফুরে মেজাজে।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) : এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোটমনির। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু (ঈগল)। তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য গোপালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ আসনে ইতমধ্যে হামলা, ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনা রয়েছে চরমে। তবে এখানে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলে ভোটাররা আশংকা করছেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাসান খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান। তবে তাঁর ছেলে আমানুর রহমান খান রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন (ঈগল)। রানা এ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে কামরুল হাসান খানের পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে এখানে নৌকার প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্রের রানা। তবে জয়ের ব্যাপারে দুই প্রার্থীই আশাবাদী।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) : এই আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী (ট্রাক)। আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে না থেকে লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজের মেয়ে ব্যারিস্টার সার ওয়াত সিরাজ শুক্লা (ঈগল)। লতিফ সিদ্দিকীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন মোজহারুল ইসলাম তালুকদার এবং শাজাহান সিরাজ ছিলেন তাঁর বন্ধু। অতীত বিবেচনায় এখানে নৌকারও রয়েছে শক্ত অবস্থান। ফলে নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর।
টাঙ্গাইল- ৫ (সদর) : এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছানোয়ার হোসেন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন (ঈগল)। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুন অর রশীদ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মুরাদ সিদ্দিকীও স্বতন্ত্র (মাথাল প্রতিক) নির্বাচন করছেন। তাই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব (কেটলি) এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোজাম্মেল হকও (লাঙ্গল) রয়েছেন আলোচনায়।

টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) : বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু এবারো এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তারেক শামস্ খান হিমু (ঈগল)। এ আসনের দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিমুর পক্ষে নির্বাচন করছেন। তবে অন্য প্রার্থীদের অবস্থান তেমনটা শক্ত না থাকায় আহসানুল ইসলাম টিটুর জয়ের সম্ভবনা বেশি। তিনি আছেন ফুরফুরে মেজাজে।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) : এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ক্লিন ইমেজের মানুষ খান আহমেদ শুভ এবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন ওরফে মন্টু স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির (লাঙ্গল) নির্বাচন থেকে সরে এসে ট্রাক মার্কাকে সমর্থন দিয়েছেন। পারিবারিক ভাবেই শুভদের রয়েছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তবে চাপে রয়েছেন খান আহমেদ শুভ। এ আসনে নৌকার সঙ্গে যুদ্ধ হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) : বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয়কে। আওয়ামী লীগের কেউ এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। তবে এ আসনের প্রতিদ্বন্দিতা করছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এখানে তাঁর শক্ত অবস্থান রয়েছে। জয়ের বাবা প্রয়াত এমপি শওকত মোমেন শাহজাহান ছিলেন কাদের সিদ্দিকীর প্রতিদ্বন্দী।
টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়ছারুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। নির্বাচনী মাঠে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই সেটা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কেন্দ্রে ভোটারদের নিরাপত্তা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমরা অত্যন্ত তৎপর আছি।’