রাজশাহীতে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- Update Time : ০২:২৬:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৪৩২ Time View
রাজশাহী মামুন রেজা : উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে একটি স্মরণসভার আয়োজন করেছে দর্শন বিভাগ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক, মূখ্য আলোচক ছিলেন বাংলা বিভগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চৌধুরী জুলফিকার মতিন। এছাড়া অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণসভায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, হাসান আজিজুল হক তার লেখনির মাধ্যমে মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না তুলে ধরেছেন। তিনি লেখালেখির পাশাপাশি মানুষের অধিকার নিয়ে রাস্তায় আন্দোলনও করেছেন। এখন হাসান আজিজুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে তার অসাম্প্রদায়িক আদর্শ, চেতনা ও মানুষের জন্য কাজ করার কণ্ঠস্বর এই সমাজে প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত। তা যদি না হয় তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শুধু আনুষ্ঠানিকতা-ই হবে। কিন্তু উনি শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য লিখে যাননি। উনি গণমানুষের জন্য লিখেছেন। উনি যে মানুষগুলির কথা বলেছেন সেই মানুষগুলো এখনো কিন্তু এই সমাজে আছে। তাই তার মতো আমাদেরও কাজের জায়গা এখনো আছে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ওবায়দুর রহমান প্রামাণিক বলেন, হাসান আজিজুল হক যে আদর্শ নিজের ভেতর ধারণ করতেন সেই আদর্শ অসা¤প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ। এই আদর্শকে ধারণ করে তিনি এই দেশে বসবাস করতেন। তিনি এমন একজন মানুষ যার উদারপন্থী চিন্তা চেতনার রূপ তার সাহিত্যের মধ্যে প্রকাশ করেছেন। একজন সর্বাত্মক সাহিত্যিক মানুষ হিসেবে আমাদের সাহিত্যকর্মে তিনি অবদান রেখে গেছেন। আমাদের কাজ হলো তার আদর্শ নিজেদের মধ্যে ধারণ করে এই সমাজকে মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করা।
হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, তিনি দর্শন বিভাগকে অতিক্রম করে অখণ্ড বাংলা ভ‚মিকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তা আজও আমাদের মধ্যে বিরাজমান। তিনি কথা বলেছেন মানুষের অন্তর্নিহিত যে সত্য সেটাকে উপলব্ধি করে। ‘আগুন পাখি’ উপন্যাস তার সময়ের সেরা সৃষ্টি। তার লেখা বিধবাদের কথা যেকোনো বোধসম্পন্ন মানুষের বারবার পড়ার কথা। আমরা এই অঞ্চলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কথা উচ্চারণ করি। কিন্তু হাসান আজিজুল হক তাদের চেয়ে কম নয় । দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম নাজিরা রিদার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখে গেছেন। তার রচিত জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘পাতালে হাসপাতালে’, ‘আমরা অপেক্ষা করছি’, ‘রোদে যাবো’, ‘রাঢ়বঙ্গের গল্প’ ইত্যাদি। আগুনপাখি ও শামুক যথাক্রমে তার রচিত প্রথম ও শেষ উপন্যাস