২০১৯ সালে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক থাকা অবস্থায়ই নিষিদ্ধ হন সাকিব। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় ওই বছরের অক্টোবরে তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। সঙ্গে ছিল আরও এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা।
পরে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিব ক্রিকেটে ফেরেন। বৃহস্পতিবার টেস্ট অধিনায়কত্বেও তিনি ফিরলেন আবার। মুমিনুল হক নেতৃত্ব ছাড়তে চাওয়ার পর আবার সাকিবকে দায়িত্ব দেয় বিসিবি।
নিষেধাজ্ঞার সময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানিয়েছিল, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে চার মাসের মধ্যে তিনবার সাকিবকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কোনোবারই তিনি আইসিসিকে বা সংশ্লিষ্ঠ কোনো কর্তৃপক্ষকে জানান নাই।
আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে অনৈতিক কিছুর প্রস্তাব পেলে যত দ্রুত সম্ভব আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হয়। বড় টুর্নামেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের ক্লাস নিয়ে এ নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। সাকিব সেসব ক্লাসে অংশ নিয়েছেন বহুবার।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে আইসিসির মহাব্যবস্থাপক (ইন্টেগ্রিটি) অ্যালেক্স মার্শাল তখন বলেন, “সাকিব আল হাসান খুবই অভিজ্ঞ একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। সে আইসিসির অনেক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে এবং ধারা অনুযায়ী বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে অবগত আছে। ফিক্সিংয়ের প্রতিটি প্রস্তাবই তার জানানো উচিত ছিল।”
সাকিব তা জানাননি এবং সেটির খেসারত তাকে দিতে হয়। এরপর আরও অনেক পথ পেরিয়ে সেই সাকিবকেই আবার টেস্ট নেতৃত্বের ভার সঁপে দিল বিসিবি।
নৈতিকতার প্রশ্নে শাস্তি পাওয়া একজন ক্রিকেটারকে আবার অধিনায়ক করা ঠিক হলো কিনা, এই প্রশ্ন উঠল সংবাদ সম্মেলনে। ক্রিকেট বিশ্বের অন্য কয়েকজনের উদাহরণও দেওয়া হলো। তবে সাকিবের শাস্তি একটু আলাদা বলে দাবি করলেন বিসিবি সভাপতি।
“এগুলো নিয়ে সব আলোচনা করেই আমরা নিয়েছি। সবকিছু আলোচনা করেই নিয়েছি। ওর ব্যাপারটার একটু ভিন্ন ছিল, অন্যদের মতো ছিল না। এটা আমি আজকে এখানে বলতে চাই না, তবে ওর ব্যাপারটা একটু আলাদা ছিল।”
সেই পার্থক্য কোথায় বা কী, আরেক দফা প্রশ্নেও সেটির গভীরে যেতে চাইলেন না বিসিবি প্রধান।
“টেস্টে আমার কাছে এই মুহূর্তে যে বিকল্পগুলো ছিল, আমাদের মনে হয়েছে, এটাই সেরা অপশন। এবং আপনারা একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, আইসিসি থেকে যে বিবৃতি ও শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, অন্যদের সঙ্গে একটা বিরাট পার্থক্য আছে। ক্লিয়ার কাট পার্থক্য আছে। আপনারা একবার পড়ে দেখেন, নিজেরাই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।”
নিষেধাজ্ঞায় থাকার সময় ২০২০ সালে জুলাইয়ে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাকিব বললেন, জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথনকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দেননি বলেই আইসিসিকে জানাননি।
“আমার মনে হয়, আমি এটা একটু বেশিই হালকাভাবে নিয়েছিলাম। অবশ্যই আমি এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।”
“আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলি ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।”