Dhaka ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Breaking News :
Logo ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন: আটক-১ Logo ফরিদপুরে আদম ব্যবসায়ীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন। Logo খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাদিউজ্জামান হাদির জানাযায় আজিজুল বারী হেলাল। Logo মানিকগঞ্জে চরে বিএনপি’র ঐক্য ও শান্তি সমাবেশ Logo বিষ খাইয়ে প্রতিবন্ধী শিশু সন্তানকে মা-বাবা হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার Logo চল্লিশ বছর পর বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফিরলো নিপালী নাগরিক Logo চাঁদপুরের কচুয়ায় আগুনে পুড়ল ২০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান Logo কেরুজ চিনিকলে চাকরি স্থায়ীকরণে অনিয়মের অভিযোগ : কেরুর এমডি’কে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ সদর দপ্তরের: অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা Logo পাবনার ভাঁড়ারার চেয়ারম্যান সুলতান গ্রেফতার Logo চাটমোহরে উদ্যোক্তাদের তৈরিকৃত স্বাস্থ্যসম্মত সরিষার তেল বিক্রয় প্রসারে বাজার সংযোগ সভা

বাংলাদেশের ইতিহা ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় ও পুজোনীয় স্থান কান্তজীর মন্দির

কামাল সিদ্দিকী
  • Update Time : ১০:২০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
  • / ৪৪০৩ Time View

কামাল সিদ্দিকী :: কেউ বলে কান্তজিউ মন্দির, কেউ বা বলে কান্তানগর মন্দির, কারো মুখে কান্তজির মন্দির। যে নামেই ডাকা হোক না কেন বর্তমান বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় ও পুজোনীয় স্থান কান্তজীর মন্দির এক অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে লাখো মানুষের প্রাণে। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলায় এর অবস্থান। ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে টেপা নদীর ধার ঘেষে কান্তনগর নামক এক নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত কান্তজির মন্দির।প্রাচীনকাল থেকেই দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি উর্বর ও পলিময় হওয়ায় পাথর সংকট ছিল। পাথর অভাবে দেশিয় ধারায় পোড়ামাটি দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছিল কান্তজীউ মন্দির নির্মাণ কাজের নিয়োজিত শিল্পীরা। হাজার বছর থেকে ইতিহাস ঐতিহ্য বহনকারী কান্তজিউ (কান্তজির) মন্দিরের দেয়াল জুড়ে পোড়া মাটির টেরাকোটা শিল্প নিদর্শন দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রাচীনকালের নানা চিত্র। প্রাচীন সব চিত্রের মধ্যে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। কান্তজিউ মন্দিরটি ঘুরে দেখলে মনে হবে যেন, চার খণ্ডে শিল্প অংকিত এক পৌরাণিক মহাকাব্যের দৃশ্যমান উপস্থাপনা। টেরাকোটায় এই সুন্দর কারুকার্য উপমহাদেশের আর নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।দেশের যেসকল প্রথম সারির ঐতিহাসিক স্থান, পুরাকীর্তি বা নিদর্শন রয়েছে, কান্তজির মন্দির তার অন্যতম। কান্তজির মন্দিরের আসল নাম- কান্তজিউ মন্দির। তবে, লোক মুখে বলতে বলতে এক সময় এর নাম কান্তজির মন্দির হয়ে যায়। বর্তমানে এই নামেই ডাকা হয়। কান্তজির মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনী মতে, যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত। বিভিন্ন তথ্য সুত্রে দাবী করা হয়, রাজা সুমিত হর কান্ত এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মন্দিরের উত্তর দিকের বেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে এই মন্দিরের কাজ শুরু করেন। ১৭২২ সালে তার মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পালিত পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এর চুড়াগুলো ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের সংস্কার কাজ করেন। তবে সুউচ্চ চূড়াগুলো আর মেরামত এখনো সম্ভব তেমন করা হয়নি। স্থাপত্যশৈলীতে মন জুড়ানো মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে- রামায়ন, মহাভারতসহ নানা পৌরণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় পনেরো হাজারের মত টেরাকাটা টালি সংযুক্ত রয়েছে। উপরের দিকে তিন ধাপে নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারপাশের সবগুলো দড়জা দিয়েই ভেতরের দেবমুর্তি দেখা যায়। চারপাশ সমান হলেও পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সবগুলো প্রবেশ পথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দু‘টো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খাঁজগুলো আলাদা করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো দেখতে খুবই সুন্দর এবং কারুকার্য খচিত। মন্দিরের উপরের দিকে হাতি এবং ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সৈন্যদের যুদ্ধের চিত্র কারুকাজ করা আছে। যার থেকে ঐতিহাসিক মহাভারতের রামায়ন যুদ্ধের একটা বর্ণনাও সেখানে পাওয়া যায়। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় একুশটি ও দ্বিতীয় তলায় সাতাশটি দরজা ও খিলান রয়েছে। তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র তিনটি দরজা। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে দর্শনার্থী, ভক্তদের জন্য বিশ্রামাগার। পেছনে রয়েছে

একটি শিবমন্দির। প্রতি বছর সারাদেশ থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও প্রচুর ভক্ত-অনুরাগী ও পর্যটকের আগমন ঘটে এই মন্দিরে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে এই কান্তজির মন্দিরকে কেন্দ্র করে মন্দিরের পাশের জমিতে রাসমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পটভূমিতে কান্তজির মন্দিরের গুরুত্ব অপরীসীম। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের এ ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা বা পুরাকির্তী নিজ চোখে না দেখলে মনোরম এই স্থাপত্যশৈলী দর্শন থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন।

Tag :

অগ্রযাত্রা স্যাটেলাইট টেলিভিশন (এটিভি বাংলা) লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২ নং শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্বরণী, রমনা, ঢাকা-১২১৭।
মোবাইল: ০১৬৪৬৪৪৪৫৩০

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বাংলাদেশের ইতিহা ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় ও পুজোনীয় স্থান কান্তজীর মন্দির

Update Time : ১০:২০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

কামাল সিদ্দিকী :: কেউ বলে কান্তজিউ মন্দির, কেউ বা বলে কান্তানগর মন্দির, কারো মুখে কান্তজির মন্দির। যে নামেই ডাকা হোক না কেন বর্তমান বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় ও পুজোনীয় স্থান কান্তজীর মন্দির এক অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে লাখো মানুষের প্রাণে। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলায় এর অবস্থান। ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক থেকে ২ কিলোমিটার পশ্চিমে টেপা নদীর ধার ঘেষে কান্তনগর নামক এক নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত কান্তজির মন্দির।প্রাচীনকাল থেকেই দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি উর্বর ও পলিময় হওয়ায় পাথর সংকট ছিল। পাথর অভাবে দেশিয় ধারায় পোড়ামাটি দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছিল কান্তজীউ মন্দির নির্মাণ কাজের নিয়োজিত শিল্পীরা। হাজার বছর থেকে ইতিহাস ঐতিহ্য বহনকারী কান্তজিউ (কান্তজির) মন্দিরের দেয়াল জুড়ে পোড়া মাটির টেরাকোটা শিল্প নিদর্শন দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রাচীনকালের নানা চিত্র। প্রাচীন সব চিত্রের মধ্যে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। কান্তজিউ মন্দিরটি ঘুরে দেখলে মনে হবে যেন, চার খণ্ডে শিল্প অংকিত এক পৌরাণিক মহাকাব্যের দৃশ্যমান উপস্থাপনা। টেরাকোটায় এই সুন্দর কারুকার্য উপমহাদেশের আর নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।দেশের যেসকল প্রথম সারির ঐতিহাসিক স্থান, পুরাকীর্তি বা নিদর্শন রয়েছে, কান্তজির মন্দির তার অন্যতম। কান্তজির মন্দিরের আসল নাম- কান্তজিউ মন্দির। তবে, লোক মুখে বলতে বলতে এক সময় এর নাম কান্তজির মন্দির হয়ে যায়। বর্তমানে এই নামেই ডাকা হয়। কান্তজির মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত। পৌরাণিক কাহিনী মতে, যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত। বিভিন্ন তথ্য সুত্রে দাবী করা হয়, রাজা সুমিত হর কান্ত এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মন্দিরের উত্তর দিকের বেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে এই মন্দিরের কাজ শুরু করেন। ১৭২২ সালে তার মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পালিত পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এর চুড়াগুলো ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের সংস্কার কাজ করেন। তবে সুউচ্চ চূড়াগুলো আর মেরামত এখনো সম্ভব তেমন করা হয়নি। স্থাপত্যশৈলীতে মন জুড়ানো মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে- রামায়ন, মহাভারতসহ নানা পৌরণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় পনেরো হাজারের মত টেরাকাটা টালি সংযুক্ত রয়েছে। উপরের দিকে তিন ধাপে নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারপাশের সবগুলো দড়জা দিয়েই ভেতরের দেবমুর্তি দেখা যায়। চারপাশ সমান হলেও পাথরের ভিত্তির উপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সবগুলো প্রবেশ পথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দু‘টো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খাঁজগুলো আলাদা করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো দেখতে খুবই সুন্দর এবং কারুকার্য খচিত। মন্দিরের উপরের দিকে হাতি এবং ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সৈন্যদের যুদ্ধের চিত্র কারুকাজ করা আছে। যার থেকে ঐতিহাসিক মহাভারতের রামায়ন যুদ্ধের একটা বর্ণনাও সেখানে পাওয়া যায়। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় একুশটি ও দ্বিতীয় তলায় সাতাশটি দরজা ও খিলান রয়েছে। তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র তিনটি দরজা। মন্দিরের চারপাশে রয়েছে দর্শনার্থী, ভক্তদের জন্য বিশ্রামাগার। পেছনে রয়েছে

একটি শিবমন্দির। প্রতি বছর সারাদেশ থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও প্রচুর ভক্ত-অনুরাগী ও পর্যটকের আগমন ঘটে এই মন্দিরে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে এই কান্তজির মন্দিরকে কেন্দ্র করে মন্দিরের পাশের জমিতে রাসমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পটভূমিতে কান্তজির মন্দিরের গুরুত্ব অপরীসীম। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের এ ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা বা পুরাকির্তী নিজ চোখে না দেখলে মনোরম এই স্থাপত্যশৈলী দর্শন থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন।